সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

রেস সাবজুডিস বা মোকদ্দমা স্থগিতকরণ কি? দেওয়ানী কার্যবিধির ১০ ধারার তাৎপর্য আলোচনা করুন। ১০ ধারা অনুযায়ী একটি মোকদ্দমা স্থগিত করতে হলে কি কি শর্ত পালন করতে হবে- তা আলোচনা করুন। [res-subjudice-under-cpc-in-bd

 

Essential Elements of Stay of Suit


  • রেস সাবজুডিস বা মোকদ্দমা স্থগিতকরণ কি?
  • দেওয়ানী কার্যবিধির ১০ ধারার তাৎপর্য আলোচনা করুন। 
  • ১০ ধারা অনুযায়ী একটি মোকদ্দমা স্থগিত করতে হলে কি কি শর্ত পালন করতে হবে- তা আলোচনা করুন। 


দেওয়ানী কার্যবিধির  ১০ ধারাতে এমন এক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যেখানে আদালতকে এমন যেকোন মোকদ্দমার বিচারকার্যের বিষয়ে অগ্রসর হতে বাধা দেয় যেখানে পূর্বে আদালতে দায়েরকৃত বিচারাধীন মোকদ্দমার পক্ষসমূহ ও বিচার্য বিষয় এবং পরবর্তীতে দায়েরকৃত মোকদ্দমার পক্ষসমূহ বিচার্য বিষয় প্রত্যক্ষ বা উল্লেখযোগ্যভাবে সমজাতীয়। এমন ক্ষেত্রে সমকালীন একই এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতকে একই বিচার্য বিষয় নিয়ে একই পক্ষসমূহের মধ্যে উপস্থাপিত সমান্তরাল মোকদ্দমার বিচার স্থগিত রাখার বিষয়ে আলোচ্য ধারাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যা সাব-জুডিস নীতির(Doctrine of Res sub judice) প্রতিষ্ঠিত। এর উদ্দেশ্য হলো একাধিক নিরর্থক মামলার হয়রানির থেকে বাদীকে রক্ষা করা এবং আদালতের ওপর মামলার চাপ কমানো।  


রেস সাবজুডিস বা মোকদ্দমা স্থগিতকরণ কি?

(What is Res-Sub-Judice/Stay of suit?)


রেস সাবজুডিস (Res-Sub Judice) একটি ল্যাটিন শব্দ যেখানে Res এর অর্থ হলো বিষয় এবং Subjudice শব্দটির অর্থ হলো বিচারাধীন। সুতরাং রেস সাবজুডিস মানে আদালতে বিচারাধীন কোন বিষয়। নীতিটি আদালতে বিচারাধীন মোকদ্দমা ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। একই পক্ষদ্বয়ের মধ্যে একই বিষয় নিয়ে একই কারণে দুটি মোকদ্দমা একই সময়ে, একই এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতে বিচারাধীন থাকতে পারে না। রেস সাবজুডিস নীতি প্রয়োগ করে এই দুইটি মোকদ্দমার মধ্যে পরবর্তীতে দায়েরকৃত মোকদ্দমার বিচার স্থগিত করা হয়।


দেওয়ানী কার্যবিধির ১০ ধারায় বলা হয়েছে যে, প্রার্থিত প্রতিকার অনুমোদন দেওয়ার এখতিয়ারসম্পন্ন বাংলাদেশের যে কোন আদালতে একই পক্ষসমূহের মধ্যে কোন মামলা বিচারাধীন থাকলে, পরবর্তীতে দায়েরকৃত মোকদ্দমা বিচার্য বিষয় সরাসরি ও প্রকৃতপক্ষে পরবর্তীতে কোন দায়েরকৃত মোকদ্দমার বিচার্য বিষয় হলে, আদালত পরবর্তীতে দায়েরকৃত  মোকদ্দমাটির বিচারকার্য পরিচালনা করবে না। 


অর্থাৎ পূর্বে দায়েরকৃত বিচারাধীন মোকদ্দমার পক্ষসমূহ ও বিচার্য বিষয় এবং পরবর্তীতে দায়েরকৃত মোকদ্দমার পক্ষসমূহ বিচার্য বিষয় একই হলে এবং যে আদালতে পূর্বে দায়েরকৃত মোকদ্দমাটি বিচারাধীন রয়েছে সেই আদালত মোকদ্দমায় যে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে তা দিতে এখতিয়ারসম্পন্ন হলে, আদালত পরবর্তীতে দায়েরকৃত মোকদ্দমাটি বিচারকার্য করবে না। 


১০ ধারার বিধান শুধুমাত্র বিচারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, মোকদ্দমা দায়ের ক্ষেত্রে নয়। এই ধারার বিধান পরবর্তী মোকদ্দমা দায়ের করাকে বারিত করে না বরং শুধুমাত্র বিচার স্থগিত করে। কোন অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ যেমন নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা বা রিসিভার নিয়োগ স্থগিত করতে ১০ ধারা আদালতকে বারিত করে না। তবে পূর্ববর্তী মোকদ্দমাটি যদি কোন বৈদেশিক আদালতে দায়ের করা হয়, তবে মামলার কারণ একই হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের কোনো আদালতে পরবর্তীতে দায়েরকৃত মামলার বিচারে ১০ ধারা বাধা সৃষ্টি  করবে না।

দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ ধারা অনুসারে বারিত না হলে দেওয়ানী আদালত সকল প্রকার দেওয়ানী কার বিচার করতে পারে। কিন্তু দেওয়ানী কার্যবিধির ১০ এবং ১১ ধারায় দেওয়ানি আদালত ‘বিচারাধীন মোকদ্দমা বা মোকদ্দমা স্থগিতকরণ বা রেস সাবজুডিস (Res-Sub-Judice) এবং দোবরা দোষ বা রেস জুডিকাটা (Res-Judicata)- এ দুই ধরনের মোকদ্দমার বিচার করতে পারবে না অর্থাৎ বিচার করার এখতিয়ার থেকে বারিত করা হয়েছে। 


দেওয়ানী কার্যবিধির ১০ ধারার তাৎপর্য বা উদ্দেশ্য বা গুরুত্ব

(Objective or importance of Section 10 of CPC)

দেওয়ানী মোকদ্দমার ক্ষেত্রে ১০ ধারা বিশেষ উদ্দেশ্যে দেওয়ানী কার্যবিধিতে যুক্ত করা হয়েছে। নিচে দেওয়ানী কার্যবিধির ১০ ধারার তাৎপর্য বা উদ্দেশ্য আলোচনা করা হলো-

১. বিরোধপূর্ণ সিদ্ধান্ত এড়ানো[To Avoid conflicting decisions]

একই বিষয়ে আদালত যেন বিরোধপূর্ণ সিদ্ধান্ত না দেয় তা থেকে আদালতকে বিরত রাখতে দেওয়ানী কার্যবিধির ১০ ধারায়  রেস সাবজুডিস নীতিটি যুক্ত করা হয়েছে। ১০ ধারার উদ্দেশ্য হলো  একই বিরোধীয় কারণ, একই বিষয়বস্তু এবং একই প্রতিকার নিয়ে দুটি একই মোকদ্দমা, একই এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতকে বিচার করা হতে বিরত রাখা। যে নীতির ওপর ১০ ধারার বিধান প্রতিষ্ঠিত তা হলো মোকদ্দমার পক্ষদ্বয়কে একই বিষয় নিয়ে দুই বা ততোধিক যৌথ কার্যের মাধ্যমে ঘুরানো যাবেন না এবং এর প্রতিকার বিষয়ে আদালতের সম্ভাব্য বিরোধপূর্ণ সিদ্ধান্ত এড়ানো।


২.মোকদ্দমার বহুত্ব নিবারণ করা[To Prohibit parallel trial on the same issues]

একই বিষয় নিয়ে যেন একাধিক মোকদ্দমা না হতে পারে তার একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ১০ ধারায় করা হয়েছে। রেস সাবজুডিস নীতির উদ্দেশ্য হলো মোকদ্দমার বাদীকে একটি মোকাদ্দমার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং একইভাবে একই বিষয় নিয়ে একাধিক মোকদ্দমা দায়ের করা হতে বিরত রাখা। অর্থাৎ একই বিষয়ে মোকদ্দমার বহুত্ব নিবারণ করা।

 ৩. পক্ষসমূহের অসুবিধা দূর করা

[To prevent both the parties from the unnecessary harassment]

একই বিষয় নিয়ে একাধিক মোকদ্দমা চলমান থাকলে পক্ষসমূহ  হয়রানির সম্মুখীন হতে পারে। ১০ ধারার উদ্দেশ্য হলো পক্ষসমূহের এই অসুবিধা দূর করা এবং  রেস জুডিকাটার নীতি কার্যকর করা।

এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, ১০ ধারা মোকদ্দমা দায়ের করাকে বারিত করেনি, কিন্তু যদি সুনির্দিষ্ট কিছু শর্তপূরণ হয় তাহলে শুধুমাত্র বিচারকে বারিত করেছে। সুতরাং আদালত পরবর্তীতে দায়েরকৃত মোকদ্দমাটি খারিজ করবে না কিন্তু বিচার স্থগিত রাখবে।


দেওয়ানী কার্যবিধির ১০ ধারার(রেস সাবজুডিস নীতি)শর্তসমূহ/নীতিমালা/উপাদানসমূহ

[Essential Elements/Conditions of  Section-10 of CPC(Stay of Suit)

১০ ধারার অধীন  রেস সাবজুডিস নীতি প্রয়োগ করে পরবর্তীতে দায়েরকৃত মোকদ্দমাটি স্থগিত করার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত শর্তসমূহ/নীতিমালা/ উপাদানসমূহ পূরণ করতে হবে-

১. রেস সাবজুডিস নীতি প্রয়োগ করতে হলে অবশ্যই দুটি মোকদ্দমা থাকতে হবে। একটি  পূর্বে দায়েরকৃত মোকদ্দমা এবং অন্যটি পরবর্তীতে দায়েরকৃত মোকদ্দমা।

২.  পূর্বে দায়েরকৃত অর্থাৎ বিচারাধীন মোকদ্দমার বিচার্য বিষয় এবং পরবর্তীতে দায়েরকৃত মোকদ্দমার বিচার্য বিষয় প্রত্যক্ষভাবে একই থাকতে হবে;

৩. বিচারাধীন মোকদ্দমা এবং পরবর্তীতে দায়েরকৃত মোকদ্দমার পক্ষ বা তাদের প্রতিনিধি একই হতে হবে অর্থাৎ বাদী-বিবাদী বা তাদের স্থলবর্তী একই বৃত্তের মধ্যে হতে হবে।

৪. পরবর্তী মোকদ্দমাটি এখতিয়ারসম্পন্ন যে আদালতে দায়ের করা হয়েছে, সেই আদালতে বা বাংলাদেশের অন্য কোন এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতে পূর্ববর্তীতে দায়েরকৃত মোকদ্দমাটি বিচারাধীন থাকবে। 

৫. পরবর্তী মোকদ্দমায় যে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে তা পূর্ববর্তী মোকদ্দমাটি যে আদালতে দায়ের করা হয়েছিল সেই আদালতের মঞ্জুর করার এখতিয়ার থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে Minocher Bokramji Damania Vs. Hema N. Dadachanji; AIR 1982 Bom 151 মামলায় বলা হয়েছে  ১০ ধারা প্রয়োগ করতে হলে পূর্ববর্তী মোকদ্দমাটি বিচার করার এখতিয়ার আদালতের থাকতে হবে। যেখানে পূর্ববর্তী মোকদ্দমায় যে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে তা মঞ্জুর করার এখতিয়ার আদালতের নেই, সেখানে  পরবর্তীতে দায়েরকৃত মোকদ্দমাটি যদিও একই পক্ষ এবং একই বিষয়ে হয়, সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে দায়েরকৃত মোকাদ্দমাটি স্থগিত করা হবে না।

৬. উভয় মোকদ্দামায় উভয় পক্ষ একই  স্বত্ব দাবি করা মোকদ্দমা দায়ের করবে। ১০ ধারার বিধান বাধ্যতামূলক এবং এই ধারায় যে সকল শর্তসমূহ আলোচনা করা হয়েছে তা পূরণ হলে পরবর্তীতে   দায়েরকৃত  মোকদ্দমাটি স্থগিত করা হবে ।


১০ ধারার বিধান প্রয়োগ করে আদালত যেমন পরবর্তীতে দায়েরকৃত মোকদ্দমার স্থগিত করতে পারে, ঠিক তেমনি ১৫১ ধারার সহজাত ক্ষমতা প্রয়োগ করে আদালত একই পক্ষসমূহের মধ্যে বিভিন্ন মোকদ্দমা একত্রীকরণ করার আদেশ দিতে পারেন যে ক্ষেত্রে বিচার্য বিষয় প্রকৃতভাবে একই থাকবে। যেহেতু  ১০ ধারার উদ্দেশ্য হলো বিরোধপূর্ণ সিদ্ধান্ত পরিহার করা, তাই যথাযথ মোকদ্দমার ক্ষেত্রে উভয় মোকদ্দমা একত্রীকরণ করে বিচার করার আদেশ আদালত দিতে পারে।

.....


Post a Comment

0 Comments