সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

কি কি পদ্ধতিতে একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করা যায়? নারাজি বলতে আপনি কি বুঝেন? একটি নারাজির দরখাস্ত নিষ্পত্তি করতে ক্ষমতাবান একজন ম্যাজিস্ট্রেট যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন, আলোচনা করুন। ম্যাজিস্ট্রেট প্রদত্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোন প্রতিকার আছে কি?

 

criminal case

কি কি পদ্ধতিতে একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করা যায়? নারাজি বলতে আপনি কি বুঝেন? একটি নারাজির দরখাস্ত নিষ্পত্তি করতে ক্ষমতাবান একজন ম্যাজিস্ট্রেট যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন, আলোচনা করুন। ম্যাজিস্ট্রেট প্রদত্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোন প্রতিকার আছে কি?

ফৌজদারি মামলায় সাধারণত  চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা ধর্ষণ, অপহরণ, খুন, যখম ইত্যাদি বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে  যে মামলা দায়ের করা হয় তা অনেকগুলো ধাপ পার করে তারপর মামলার রায় সম্পন্ন হয়। আর ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী ২টি পদ্ধতিতে (এজাহারের মাধ্যমে এবং নালিশের মাধ্যমে) একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করা যায়।


প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বা এজাহারের ভিত্তিতে মামলা দায়ের

প্রথমত, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারার অধীনে যে কোন ব্যক্তি আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটন সম্পর্কে থানায় এজাহার দায়ের করতে পারে। দ্বিতীয়ত, আমলযোগ্য অপরাধ সম্পর্কে পুলিশ কোন উৎস হতে খবর জানতে পারে, যেমন ফোনের মাধ্যমে কিংবা খবরের কাগজের মাধ্যমে (ধারা: ১৬৭)। তৃতীয়ত, ফৌজাদরী কার্যবিধির ১৯০ ধারার অধীনে ম্যাজিস্ট্রেট আমলযোগ্য কিংবা আমল-অযোগ্য অপরাধের cognizance নেয়ার পর উক্ত বিষয়টি পুলিশ স্টেশনে তদন্তের জন্য পাঠাতে পারেন। চতুর্থত, ফৌজদারী কার্যবিধির ২০০ ধারার অধীনে ম্যাজিস্ট্রেট কোন অভিযোগ (complaint) গ্রহণ করে উক্ত অভিযোগটি থানায় তদন্ত করার জন্য FIR হিসেবে প্রেরণ করতে পারেন। উপরোক্ত চারটি উৎসের যে কোন একটি থেকে খবর (information) পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ স্টেশনের officer in charges বা দারোগা পুলিশ স্টেশনের ডায়রিতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং ডায়রীতে লিখিত information টি First Information Reports (FIR) বা এজাহার বলে গণ্য হবে।


নালিশী দরখাস্ত বা কমপ্লেইন্টের ভিত্তিতে মামলা দায়ের

অন্যদিকে, যখন পুলিশ আমল অযোগ্য অপরাধ সংঘটনের সংবাদ পায় তখন পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ব্যতীত এরূপ অপরাধের কোন তদন্ত করতে পারে না। এরূপ ক্ষেত্রে দারোগা বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিষয়টি সাধারণ ডায়েরীতে (G.D. entry) অন্তর্ভুক্ত করেন এবং অভিযোগটিসহ অভিযোগকারীকে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করেন। ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট অভিযোগসহ অভিযোগকারী উপস্থিত হলে ম্যাজিস্ট্রেট ২০০ এবং ১৫৫ ধারার অধীনে অভিযোগকারীকে শপথের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। দ্বিতীয়ত, যে কোন ব্যক্তি সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আমল অযোগ্য অপরাধ সংঘটনের ব্যাপারে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাতে পারে। উপরোক্ত দু'টি পন্থার যেকোন একটির মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগটি পৌছার সাথে সাথে CR case নাম্বার (Complaint Register Case Number) কিংবা CRP নাম্বার (Complaint Register Petition Case Number) পড়বে। এরূপ অভিযোগ পাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগকারীকে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন। এরূপ পরীক্ষার পরে ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত অপরাধ সম্পর্কে cognizance নিতেও পারেন অথবা অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে আবেদন বাতিল করে দিতে পারেন অথবা তিনি বিষয়টির উপর তদন্ত করার জন্য আদেশ দিতে পারেন।


নারাজি দরখাস্ত

এজাহার বা নালিশের ভিত্তিতে থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ মামলাটির উপর তদন্ত করে। উক্তরূপ তদন্তশেষে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩ ধারার বিধান অনুযায়ী তদন্ত কারী কর্মকর্তা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দাখিল করেন। আবার যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় না, তাদেরকে মামলা হতে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে থাকেন। অভিযোগকারী যদি মনে করে যে, সঠিক তদন্ত না করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে কিংবা তদন্তে পক্ষপাতিত্ব করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে তাহলে অভিযোগকারী উক্ত চূড়ান্ত রিপোর্টের বিরূদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেটের বরাবর দরখাস্ত বা আপত্তি দাখিল করতে পারে। এরূপ দরখাস্তকে নারাজি দরখাস্ত বলা হয়।


নারাজি দরখাস্ত নিষ্পত্তি করার পদ্ধতি

নারাজি দরখাস্ত পাওয়ার পরে যদি ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট নথিপত্র, কেস ডায়েরী, নারাজির দরখাস্ত ইত্যাদি বিশ্লেষণপূর্বক, তিনি মনে করেন যে, তদন্তকারী কর্মকর্তার চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল না করে অভিযোগপত্র দাখিল করা উচিত ছিল, সেক্ষেত্রে খোরশেদ আলম বনাম রাষ্ট্র ২৭ ডিএলআর (১৯৭৫) ১১১ মামলার রায়ের আলোকে আদালত নারাজি দরখাস্ত টি নিষ্পত্তি করার জন্য নিম্নোক্ত উপায়ে অগ্রসর হতে পারেন–

১. ম্যাজিস্ট্রেট নারাজি দরখাস্তটিকে নালিশ দরখাস্ত (পিটিশন অব কমপ্লেইন্ট) হিসাবে গণ্য করতে পারেন।

২. ফৌজদারী কার্যবিধির ২০০ ধারায় শপথ গ্রহণপূর্বক অভিযোগকারীকে পরীক্ষা করে ১৯০(১) (ক) ধারামতে অভিযোগ আমলে নিতে পারেন এবং ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৪ ধারায় আসামীর বিরুদ্ধে প্রসেস ইস্যু করতে পারেন;

৩. ফৌজদারী কার্যবিধির ২০২ ধারা মোতাবেক আদালত নিজেই মামলাটির বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে পারে অথবা মামলাটি অধঃস্তন কোন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট তদন্তের জন্য প্রেরণ করতে পারে। বিচার বিভাগীয় তদন্তে যদি ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয়, তবে মামলাটি আমলে নিয়ে ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৪ ধারায় আসামীর বিরুদ্ধে প্রসেস ইস্যু করতে পারেন, আরও সমর্থন পাওয়া যায় আব্দুল হক বনাম রাষ্ট্র (২৯ ডিএলআর (১৯৭৭) ৪২৭) মামলার সিদ্ধান্তে; অথবা

৪. ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩ (৩খ) ধারার বিধান মতে, নির্দিষ্ট বিষয়গুলো উল্লেখপূর্বক আরও তদন্তের জন্য মামলাটি থানায় পাঠিয়ে দিতে পারেন।

খোরশেদ আলম বনাম রাষ্ট্র মামলার রায়ে উল্লেখিত উপায়সমূহ পরবর্তীতে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে আব্দুস সালাম বনাম রাষ্ট্র [৩৬ ডিএলআর (এডি) (১৯৮৪) ৫৮] মামলার রায়ে অনুমোদিত হয়েছে।


নারাজি দরখাস্ত অগ্রাহ্য হলে তার প্রতিকার

(১) নারাজি দরখাস্ত অগ্রাহ্য হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৬ ধারামতে দায়রা জজ আদালতে বা হইকোর্ট বিভাগে আবেদন করতে পারেন। আব্দুর রাজ্জাক বনাম রাষ্ট্র [৩৫ ডিএলআর (১৯৮৩) ১০৩) মামলার রায়ে প্রকাশ, যখন উপরস্থ ও অধঃস্তন আদালতকে একটি ক্রমতা দেয়া হয়, তখন নীতিগতভাবে অধঃস্তন আদালতে আগে যাওয়া উচিত। সুতরাং নারাজী দরখাস্ত অগ্রাহ্য হলে প্রথমে দায়রা জজ কোর্টে প্রতিকার চাওয়া উচিৎ।

(২) নারাজি দরখাস্ত অগ্রাহ্য করে ম্যাজিস্ট্রেট চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করে আসামীকে অব্যাহতি দিলে নিজে আর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে পারে না। তবে যেহেতু অব্যাহতির আদেশ মামলার পূর্ণাঙ্গ মেধাভিত্তিক নিষ্পত্তি করে নাই, সেহেতু দরখাস্তকারী নতুন নালিশ দরখাস্ত বা এজাহার দায়ের করতে পারে। রাশারাজ সরকার বনাম রাষ্ট্র, 52 DLR 598 মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ এই মমতামত ব্যক্ত করেছেন।



Post a Comment

0 Comments