সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

প্রশ্নঃগ্রেফতার কাকে বলে? কখন কি পরিস্থিতিতে পুলিশ কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে?(arrest without warrant by the police with laws)

প্রশ্নঃগ্রেফতার কাকে বলে? কখন কি পরিস্থিতিতে পুলিশ কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে?(arrest without warrant by the police with laws)


প্রশ্নঃগ্রেফতার কাকে বলে? কখন কি পরিস্থিতিতে পুলিশ কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে?


গ্রেফতার(Arrest)

ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮ এর ৪৬ ধারা এবং পুলিশ রেগুলেশন্স অব বেঙ্গল (পিআরবি) এর ৩১৬ বিধি অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা আইনের ব্যত্যয় ঘটানোয় পরিপ্রেক্ষিতে কথা বা কাজ দ্বারা আইনগতভাবে কোন ব্যক্তিকে বিচারের জন্য বা আদালতে হাজির করার জন্য তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা খর্ব করে পুলিশ হেফাজতে বা সরকারি হেফাজতে নেওয়ার নামই গ্রেফতার ।

গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে শক্তি বা বল প্রয়োগ এবং মৃত্যু ঘটানো


১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪৬ ধারার উপধারা(২) অনুসারে গ্রেফতারকারী/পুলিশ অফিসার/ জনসাধারণ যখন কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেন এবং সেসময় অভিযুক্ত ব্যক্তি বা আসামি যদি বলপূর্বক গ্রেপ্তারের বাধা দেয় অথবা গ্রেপ্তার এড়ানোর চেষ্টা করেন তাহলে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য যতটুকু বল প্রয়োগ করা প্রয়োজন ততটুকু বল প্রয়োগ করতে পারবেন এমনকি প্রয়োজনীয় সকল কৌশল অবলম্বন করতে পারবেন।


তাছাড়া গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি যদি এমন কোনো অপরাধ করে থাকে যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং উক্ত ব্যক্তি গ্রেপ্তারে বাধা দিলে বা গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টা করলে তবে গ্রেপ্তার কার্যকরের লক্ষ্যে গ্রেপ্তারকালে উক্ত ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যেতে পারবে- মর্মে ফৌজদারি আইনের ৪৬ ধারার উপধারা(৩) এবং পুলিশ রেগুলেশন্স অব বেঙ্গল-১৯৪৩ (পিআরবি) প্রবিধান ১৫৩(ঘ) তে বলা রয়েছে।

ফৌজদারি কার্যবিধির বিভিন্ন ধারায় পুলিশ অফিসার বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারেন।যেসব ধারা অনুযায়ি বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যেতে পারে তা নিচে তুলে ধরা হলোঃ-

(১) ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ (১) উপধারার বিধান মতে যে ব্যক্তি ধর্তব্য অপরাধ করেছেন বলে পর্যাপ্ত কারন আছে কিংবা প্রমান আছে এমন ব্যক্তিকে সন্দেহবশত পুলিশ অফিসার বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারেন। ২৯ DLR ২৫ SC মামলায় বলা হয়েছে আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে ৫৪ ধারা মোতাবেক পুলিশ অফিসার বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারেন।

(২) আইনানুগ কারণ ব্যতিত যার নিকট ঘর ভাঙ্গার যন্ত্রপাতি রয়েছে তাকে বিনা পরোয়ানায় পুলিশ অফিসার গ্রেফতার করতে পারে[ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮ এর ৫৪ (২)]।

(৩) ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮ এর ৫৪ (৩) অনুযায়ি আদালত কর্তৃক ঘোষিত অপরাধী পুলিশ অফিসার কর্তৃক বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার হতে পারেন।

(৪) তাছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮ এর ৫৪ (৪) অনুযায়ী যার নিকট চোরাই মালামাল পাওয়া যাবে তাকেও পুলিশ অফিসার বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারবেন।

(৫) ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪(৫) উপধারা মতে পুলিশের আইনানুগ কার্যে বাধা প্রদানকারী ব্যক্তিও বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার হতে পারেন।

(৬) সামরিক বাহিনী থেকে পলায়নকারী ব্যক্তিও বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের আওতায় আনা যাবে মর্মে ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮ এর ৫৪ (৬) উপধারায় বলা আছে।

(৭) এমন কার্য যা বাংলাদেশে করলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতো, তা যদি বিদেশে সেই অপরাধ করে ফিরে আসলে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের আওতায় আনা যাবে বলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪(৭)উপধারায় বলা রয়েছে।

(৮) কোন মামলায় জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬৫(৩) উপধারা অমান্য করলে উক্ত কার্যবিধির ৫৪(৮) উপধারায় গ্রেফতার করা যাবে।

(৯) ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪(৯) উপধারার বিধান মতে কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতারের নিমিত্ত অন্য পুলিশ অফিসারের কাছ থেকে অনুরোধপত্র পাওয়া গেলেও বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের আওতায় আনা যাবে।

(১০) ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ধারার নির্দেশনা মতে থানার অফিসার ইনচার্জ যদি দেখেন তার থানাধীন এলাকায় কো্নো ব্যক্তি তার উপস্থিতি গোপনপূর্বক আমলযোগ্য অপরাধ সংগঠিত করা নিমিত্ত সাবধানতা অবলম্বন করছে কিংবা এমন ব্যক্তি যার প্রকাশ্য কোন জীবিকা নেই,,নিজের সম্পর্কে সঠিক কোন বিবরণ দেয়নি বা চোর/ডাকাত/গৃহভঙ্গকারী বলে পরিচিত এমন কোন ব্যক্তি অবস্থান করছে তাহলে ওই ব্যক্তিকে পুলিশ অফিসার কর্তৃক বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার হতে পারেন।নজির হিসেবে ১৮ অল.২৪৬ (ডিবি) মামলা দেখা যেতে পারে।

(১১)ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬ ধারার নির্দেশনা মতে পুলিশ অফিসার যখন তাঁর কোন অফিসারকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের দায়িত্ব দিলেও গ্রেফতার হতে পারেন।

(১২) আমলযোগ্য অপরাধীকে তার নাম-পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে কোন উত্তর পাওয়া না গেলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৭ ধারা এবং পিআরবি প্রবিধান ৩১৬ অনুযায়ি বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যাবে।

(১৩)ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৯(২) ধারা অনুযায়ি বেসরকারি ব্যক্তি কর্তৃক গ্রেফতারকৃতকে পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক পুনরায় গ্রেফতার হতে পারেন।

(১৪) ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭ ও ১২৮ ধারা মতে বেআইনী সমাবেশ ছত্রভঙ্গের আদেশ অমান্য ও উপেক্ষা করলেও গ্রেফতার করা যাবে।

(১৫) ফৌজদারি কার্যবিধি ১২৪(৬) ধারা মোতাবেক জামিনের শর্ত অমান্য করলে এবং আদালত কর্তৃক ১২৪(৬) বাতিল করলে পুলিশ অফিসার কর্তৃক বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার হতে পারেন।

(১৬)ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫১ ধারার বিধান মতে আমলযোগ্য অপরাধের ষড়যন্ত্রকারী বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার হতে পারেন।

(১৭) সাক্ষী বা ফরিয়াদী আদালতে হাজিরপূর্বক মুচলেকা দিতে অস্বীকার করলেও ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭১ ধারার আওতায় পুলিশ অফিসার বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারবেন।

(১৮) ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(৩)ধারার বিধান মতে যে শর্তে কোন দণ্ড স্থগিত/ মওকুফ করা হয়েছে তার কোনটি পালন করা হয়নি বলে প্রমান পাওয়া গেলে স্থগিত/মওকুফের আদেশ বাতিল করা হলে পুলিশ অফিসার কর্তৃক বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার হতে পারেন।

অন্যান্য আইন বা অধ্যাদেশ মোতাবেক পুলিশ অফিসার কর্তৃক বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার


(১৯) সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮ এর ৭২, ৭৩, ৭৫, ৭৭, ৭৯, ৮৪, ৮৬, ৮৯, ৯২(১), ৯৮ বা ১০৫ ধারা মোতাবেক কেউ শাস্তিযোগ্য কোন অপরাধ করলে অপরাধীকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই ১১০ (১) ধারা অনুসারে গ্রেফতার করা যাবে।

(২০) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ২৩ (১)(ঘ) ধারা মোতাবেক গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

(২১) রেলওয়ে আইন-১৮৯০ এর ১০০, ১০১, ১১৯, ১২০, ১২১, ১২৬, ১২৭, ১২৯ ও ১৩০(১) এর মোতাবেক কেউ শাস্তিযোগ্য কোন অপরাধ করলে অপরাধীকে ১৩১ ও ১৩২ ধারা মোতাবেক বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যাবে।

(২২) ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ৩৪ ধারা অনুসারে পৌরসভায় জনগনের চলাচলের পথে অসুবিধা বা বিরক্তি সৃষ্টিজনিত অপরাধ এবং ৩৪(ক) ধারা মোতাবেক চিত্ত বিনোদনের টিকিট কেউ কালোবাজারী করলে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার হতে পারেন।

(২৩) অস্ত্র আইন-১৮৭৮ এর ১২ ধারা মোতাবেক সন্দেহজনক অবস্থায় অস্ত্র ইত্যাদি বহনকারীকে ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার করা যাবে।

(২৪) ১৯২৭ সালের বন আইনের ৬৪(১) ধারায় পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ।

(২৫) খেয়া আইন-১৮৮৫ এর ২৭ ও৩০ ধারা মোতাবেক অপরাধ করলে উক্ত আইনের ৩১ ধারা অনুযায়ী ওয়ারেন্ট ছাড়া Arrest করা যাবে।

(২৬) ১৯২০ সালের পাসপোর্ট আইনের ধারা-৩ অনুযায়ী কেউ অপরাধ করলে উক্ত আইনের ধারা-৪ মোতাবেক সেই ব্যক্তি পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার হতে পারেন।

(২৭) The Official Secrets Act-১৯২৩ এর ৩, ৫(১), ৬(১) ও ৯ ধারা অনুযায়ী অপরাধ করলে উক্ত আইনের ১২ ধারা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যাবে ।

(২৮) ১৮৮৪ সালের বিস্ফোরক আইনের ১৩ ধারা মোতাবেক গুরুতর অপরাধ সংঘটনকারীকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার যাবে ।

(২৯) ডিএমপি অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এর ধারা-১০০, সিএমপি অধ্যাদেশ ১৯৭৮ এর ধারা-১০৩, কেএমপি অধ্যাদেশ-১৯৮৫, আরএমপি অধ্যাদেশ-১৯৯২ এবং বরিশাল মহানগরী পুলিশ আইন, ২০০৯, সিলেট মহানগরী পুলিশ আইন, ২০০৯ এর ধারা-১০৪ এবং রংপুর মহানগরী পুলিশ আইন, ২০১৮,গাজীপুর মহানগরী পুলিশ আইন, ২০১৮ এর ধারা-১০২ তে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতা্রের ক্ষমতা রাখা হয়েছে।



বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের বিভিন্ন ধারা
শর্ট টেকনিক

আইন/অধ্যাদেশের নাম ধারা নম্বর
১. ফৌজদারি কার্যবিধি- ১৮৯৮ ৪৬, ৫৪(১-৯), ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৫৯(২), ১২৪(৬), ১২৭, ১২৮, ১৫১, ১৭১ ও ৪০১(৩) ধারা
২.পিআরবি প্রবিধান ৩১৬
৩.সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮ ১১০ (১) ধারা
৪.মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ ২৩ (১)(ঘ) ধারা
৫.রেলওয়ে আইন-১৮৯০ ১৩১ ও ১৩২ ধারা
৬.পুলিশ আইন-১৮৬১ ৩৪ ও ৩৪(ক) ধারা
৭.অস্ত্র আইন-১৮৭৮ ১২ ধারা
৮.বন আইন-১৯২৭ ৬৪(১) ধারা
৯.খেয়া আইন-১৮৮৫ ৩১ ধারা
১০.পাসপোর্ট আইন-১৯২০ ৪ ধারা
১১.The Official Secrets Act-১৯২৩ ১২ ধারা
১২.বিস্ফোরক আইন-১৮৮৪ ১৩ ধারা
১৩.ডিএমপি অধ্যাদেশ-১৯৭৬ ১০০ ধারা
১৪.রংপুর মহানগরী পুলিশ আইন, ২০১৮
১৫.গাজীপুর মহানগরী পুলিশ আইন, ২০১৮
১০২ ধারা
১৬.সিএমপি অধ্যাদেশ ১৯৭৮ ১০৩ ধারা
১৭.কেএমপি অধ্যাদেশ-১৯৮৫
১৮.আরএমপি অধ্যাদেশ-১৯৯২
১৯.সিলেট মহানগরী পুলিশ আইন, ২০০৯
২০.বরিশাল মহানগরী পুলিশ আইন, ২০০৯
১০৪ ধারা



Post a Comment

0 Comments