সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের আলোকে প্রতিবন্ধকতা (Estoppel) নীতির বিস্তারিত আলোচনা করুন।

Estoppel


 ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের আলোকে প্রতিবন্ধকতা (Estoppel) নীতির বিস্তারিত আলোচনা করুন। 


প্রতিবন্ধকতা (Estoppel) নীতি

প্রতিবন্ধকতা (Estoppel) হলো এক ধরনের আইনগত নীতি, যার দ্বারা একজন ব্যক্তি তার পূর্বের বক্তব্য, আচরণ বা প্রতিনিধিত্বের বিপরীত কিছু বলার বা করার অধিকার হারায়, যদি তার সেই বক্তব্য বা আচরণের ওপর অন্য কেউ নির্ভর করে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি নেয়।

সরল ভাষায়:

➔ আপনি কাউকে কিছু বললেন বা বোঝালেন,

➔ সে আপনাকে বিশ্বাস করে সিদ্ধান্ত নিল বা কাজ করল,

➔ এখন আপনি হঠাৎ করে তা অস্বীকার করতে পারবেন না।

➔ কারণ এতে তার ক্ষতি হবে, যা আইন সমর্থন করে না।


Estoppel শব্দটি ফরাসী শব্দ "Estoupe" হইতে সৃষ্ট, যাহার অর্থ হচ্ছে নিবৃত্তি। কোন ব্যক্তি যখন একটি কথা বলে ও সে কথার ভিত্তিতে অপর ব্যক্তি কোন কার্য করিয়া থাকে তখন প্রথম ব্যক্তিকে তাহার সে কথাটি আর পরিবর্তন করিতে দেয়া যায় না। ইহাই হচ্ছে প্রতিবন্ধ সূত্রের মূল কথা। 


এই সূত্রটি সাক্ষ্য আইনের ধারা ১১৫ তে বলা হইয়াছে। এই ধারায় বলা হইয়াছে যে, কোন ব্যক্তি যখন তাহার ঘোষণা, কার্য কিংবা নিরবতা দ্বারা অপর ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন বিষয় সত্য বলে বিশ্বাস করাইয়াছেন ও সেই বিশ্বাসের বশবর্তী হইয়া কোন কার্য করিতে দিয়াছেন, তখন সেই ব্যক্তি কিংবা তাহার প্রতিণিধির সঙ্গে কোন মোকদ্দমায় উক্ত বিষয়ের সত্যতা অস্বীকার করিতে পারিবেন না। কোন ব্যক্তি যখন তাহার ঘোষনার মাধ্যমে অপর কোন ব্যক্তিকে কোন কিছু করিতে প্ররোচিত করে, তখন প্রথম ব্যক্তি তাহার ঘোষণা আর বাতিল করিতে পারেন না। উক্ত ঘোষণা প্রতিবন্ধরুপে কার্য করে নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কেউ যেনো একই বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলিতে না পারে তারই ব্যবস্থা করা হইয়াছে এই প্রতিবন্ধ নীতিতে।


ঘটনার বিষয়ে প্রতিবন্ধ নীতি বলবত হইলেও আইন বিষয়ে এই নীতি বলবত নয়। কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আইন বিষয়ে ত্রুটিপূর্ণ তথ্য দিলে ও অপর ব্যক্তি তাহার দ্বারা প্রভাবিত হইয়া কোন কার্য করিলে আইন বিষয়ে ভুল তথ্য প্রদান করিলে ও অপর ব্যক্তি তাহার দ্বারা প্রভাবিক হইয়া কোন কার্য করিলে আইন বিষয়ে ত্রুটিপূর্ণ তথ্য দাতার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধ নীতি কার্যকরী করা যায় না। তাই কোন নাবালক তাহার সম্পত্তি বিক্রয় করিতে আইনগত কোন অসুবিধা নাই এ কথা বলিয়া অপরকোন ব্যক্তিকে তাহার সম্পত্তি ক্রয় করিতে প্ররোচিত করিতে পারে যদি সে বিক্রয় নাকচ করিতে চায় তবে সে তাহা পারিবে কেননা এইক্ষেত্রে তাহার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধ নীতি বলবত হইবে না। ইহা ধরিযা লওয়া হয় যে, দেশের আইন সকলে জানে। তাই অপরে কথায় আইনের অজ্ঞতা হেতু কোন কার্য করিলে আইনের সাহায্য সে পাইবে না।

সংক্ষেপে মনে রাখার জন্য (KEY POINTS): প্রতিশ্রুতি + নির্ভরতা + অবস্থান পরিবর্তন + ক্ষতি + সচেতনতা = Estoppel

প্রতিবন্ধকতা (Estoppel) নীতির উপাদানসমূহ

প্রতিবন্ধকতা হলো এক ধরনের আইনগত নীতি, যেখানে একজন ব্যক্তি কোনো পূর্বঘোষিত অবস্থান বা আচরণের বিপরীতে পরে গিয়ে ভিন্ন দাবি করতে বাধাপ্রাপ্ত হন, যদি তার পূর্বের আচরণ বা বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে অন্য কেউ নিজের অবস্থান বা সিদ্ধান্ত নির্ভর করে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে।

মূল উপাদানগুলো হলো:

  1. প্রতিশ্রুতি বা প্রতিনিধিত্ব (Promise or Representation)
    একজন ব্যক্তি (প্রতিশ্রুতিদাতা) কোনো একটি বক্তব্য বা আচরণ করেন, যা সত্য বলে প্রকাশ পায় বা বোঝানো হয়।এটি হতে পারে মৌখিক, লিখিত, বা আচরণগত (conduct)।

  2. বিশ্বাস ও নির্ভরতা (Reliance)
    অপরপক্ষ (যাকে বলা হয় promisee বা representee) সেই প্রতিশ্রুতি বা প্রতিনিধিত্বের ওপর বিশ্বাস করে এবং নির্ভর করে কাজ করে।

  3. ক্রিয়া বা কার্যকলাপ (Change of Position / Action)
    সেই নির্ভরতার ভিত্তিতে অপরপক্ষ নিজের অবস্থান বা কাজ পরিবর্তন করে (যেমন, আর্থিক সিদ্ধান্ত নেয়, সম্পদ খরচ করে ইত্যাদি)।

  4. অন্যায় বা ক্ষতির আশংকা (Detriment or Inequity)
    যদি প্রথম ব্যক্তি এখন তার পূর্বের অবস্থান থেকে সরে যায়, তবে নির্ভরকারী ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বা অন্যায়ভাবে ক্ষতি হবে।

  5. ইনটেনশন বা জ্ঞাত জ্ঞান (Knowledge / Intention)
    প্রথম ব্যক্তি সচেতনভাবে বা যুক্তিসঙ্গতভাবে জানতেন বা জানা উচিত ছিল যে, তার আচরণের ফলে অন্য ব্যক্তি নির্ভর করতে পারে।

প্রতিবন্ধকতা (Estoppel) নীতির শর্তসমূহ

বাংলাদেশে (এবং সাধারণত) Estoppel প্রযোজ্য হতে হলে কয়েকটি মূল শর্ত পূরণ করতে হয়। এগুলো হলো:

১. প্রতিনিধিত্ব বা প্রতিশ্রুতি (Representation or Promise)

একজন ব্যক্তি আরেকজনকে স্পষ্ট বা পরোক্ষভাবে কোনো বিষয় সম্পর্কে জানান বা এমন আচরণ করেন যাতে মনে হয় তিনি একটি সত্য অবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছেন।  এই প্রতিনিধিত্ব হতে পারে: মৌখিক (oral), লিখিত (written) এবং আচরণগত (by conduct)।

২. বিশ্বাস (Belief in Representation)

যে ব্যক্তি প্রতিনিধিত্ব পেয়েছেন (promisee), তিনি সত্যিকার অর্থে বিশ্বাস করেন যে প্রতিনিধিত্ব বা প্রতিশ্রুতি সত্য।
বিশ্বাসটি সৎভাবে (bona fide) হতে হবে — ইচ্ছাকৃত ভুল বোঝাবুঝি চলবে না।

৩. নির্ভরতা (Reliance)

প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার পর ব্যক্তি তার উপর নির্ভর করেন এবং কিছু সিদ্ধান্ত নেন বা কাজ করেন। উদাহরণ: জমির মালিকানা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে বাড়ি নির্মাণ শুরু করা।

৪. অবস্থানের পরিবর্তন (Change of Position)

নির্ভরতার কারণে ব্যক্তি তার আগের অবস্থা পরিবর্তন করেন। যেমন: অর্থ বিনিয়োগ, কাজের সুযোগ হারানো, নতুন দায়িত্ব নেওয়া ইত্যাদি।

৫. ক্ষতির সম্ভাবনা বা ক্ষতি (Detriment)

যদি প্রতিশ্রুতি দেওয়া ব্যক্তি তার কথা রাখেন না, তাহলে নির্ভরকারী ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
ক্ষতি হতে পারে আর্থিক, আইনি অধিকার হারানো বা অন্য কোনো বাস্তব ক্ষতি।

৬. ন্যায়বিচারের অভাব (Inequity)

যদি প্রতিশ্রুতি দেওয়া ব্যক্তি তার কথা থেকে সরে আসেন, তবে তা হবে অন্যায় বা অবিচার। আদালত দেখবে: কথা না রাখা কি ন্যায়ের বিরুদ্ধে হবে?

প্রতিবন্ধকতার (Estoppel) শ্রেণীবিভাগ

বাংলাদেশের আইন এবং ইংরেজি প্রচলিত আইনে (common law) অনুযায়ী, Estoppel মূলত কয়েকটি প্রধান ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগের নিজস্ব প্রয়োগ ও শর্ত আছে।


১. Estoppel by Representation of Fact (তথ্যের প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে প্রতিবন্ধকতা)

যখন একজন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা অবহেলাবশত আরেকজনকে কোনো বাস্তব তথ্য সম্পর্কে এমন কিছু বলেন বা করেন, যার ওপর ভিত্তি করে অন্যজন নির্ভর করেন। পরে সেই ব্যক্তি সেই তথ্য অস্বীকার করতে পারেন না। উদাহরণ:কেউ বলে, "এই জমি তোমার।" অন্য ব্যক্তি সেটির উপর নির্ভর করে ঘর বানিয়ে ফেলে।

২. Promissory Estoppel(প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে প্রতিবন্ধকতা)

যখন একজন ব্যক্তি ভবিষ্যতের কোনো প্রতিশ্রুতি দেন এবং অপর পক্ষ তা বিশ্বাস করে নির্ভর করে কাজ করে। পরে প্রতিশ্রুতি প্রদানকারী সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে পারেন না, যদিও প্রতিশ্রুতিতে আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল না। উদাহরণ:কোনো ঋণদাতা ঋণ আদায় করবে না বলে আশ্বাস দিল, ঋণগ্রহীতা বিশ্বাস করে ঋণ পরিশোধ বন্ধ করল।

৩. Proprietary Estoppel(সম্পত্তির ভিত্তিতে প্রতিবন্ধকতা)

যখন কেউ কাউকে সম্পত্তি নিয়ে প্রতিশ্রুতি বা আচরণ করেন এবং অপর পক্ষ সেটির ওপর নির্ভর করে ব্যয় বা ত্যাগ করেন। তখন প্রতিশ্রুতি প্রদানকারী সেই সম্পত্তির অধিকার অস্বীকার করতে পারেন না। উদাহরণ: একজন বৃদ্ধ বলেন, "তুমি এই জমিতে থাকো, আমি তোমার নামে লিখে দেব।" সেই ব্যক্তি ঘর বানায়, বিনিয়োগ করে পরে বৃদ্ধ জমি দিতে অস্বীকার করলে আদালত Proprietary Estoppel প্রয়োগ করতে পারে।

৪. Estoppel by Conduct(আচরণের ভিত্তিতে প্রতিবন্ধকতা)

যখন কারো আচরণ বা নীরবতা এমন হয় যে, অন্য পক্ষ বিশ্বাস করে কোনো নির্দিষ্ট অবস্থা বিদ্যমান। আচরণের ভিত্তিতে যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। উদাহরণ: কোনো জমির মালিক কারো দখলদারি দেখে চুপ থাকলেন (অন্তরোধ করলেন না), পরে তিনি দখল অস্বীকার করতে পারবেন না।

৫. Estoppel by Deed(দলিলের ভিত্তিতে প্রতিবন্ধকতা)

যখন কোনো দলিলের মাধ্যমে কেউ কোনো বিষয় স্বীকার করেন, পরে সেই দলিলের বিরুদ্ধে কোনো ভিন্ন দাবি করতে পারেন না। উদাহরণ: জমির দলিলে কেউ "আমি মালিক" বলে লিখে দেন, পরে অস্বীকার করতে পারবেন না।
৬. Estoppel by Record / Res Judicata (রেকর্ড বা বিচারশেষ সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা)

যখন কোনো মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়, তখন সেই বিষয়ে পুনরায় মামলা করা বা ভিন্ন দাবি তোলা বন্ধ থাকে। এটি কিছুটা Res Judicata নীতির মতো।)

সংক্ষেপে ছক:

ক্রম

ধরণ

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

Representation of Fact

তথ্য বা বাস্তব প্রতিনিধিত্ব

Promissory Estoppel

প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে

Proprietary Estoppel

সম্পত্তির প্রতিশ্রুতিতে

Conduct

আচরণ বা নীরবতার মাধ্যমে

Deed

দলিলের মাধ্যমে

Record / Res Judicata

বিচার রেকর্ডের ভিত্তিতে

প্রতিবন্ধকতা (Estoppel) নীতির সীমাবদ্ধতা (Limitations)

যদিও প্রতিবন্ধকতা (Estoppel) ন্যায়বিচার রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়,
তবে এর কিছু সীমা বা সীমাবদ্ধতা আছে, যার বাইরে এটি প্রয়োগ করা যায় না।


১. আইনবিরুদ্ধ বা অবৈধ প্রতিশ্রুতিতে Estoppel চলে না

যদি কাউকে এমন কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, যা আইনবিরুদ্ধ বা বেআইনি, তাহলে সেই প্রতিশ্রুতির ওপর Estoppel প্রয়োগ করা যাবে না। উদাহরণ:কেউ অবৈধ মাদক ব্যবসার অংশীদার হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে অস্বীকার করতে পারবেন। কারণ: আদালত অবৈধ কাজে Estoppel প্রয়োগ করবে না।

২. আইনের পরিবর্তন বা আইনি অধিকারকে বাধা দিতে পারে না

Estoppel কোনো ব্যক্তিকে আইনি অধিকার প্রয়োগ করা থেকে বা আইনের পরিবর্তিত অবস্থান অনুসরণ করা থেকে বাধা দিতে পারে না। উদাহরণ: রাষ্ট্রের কর আদায় সংক্রান্ত নীতিতে পরিবর্তন এলে পূর্বের আশ্বাস দিয়ে নতুন কর না নেওয়া যাবে না বলে কেউ Estoppel দাবি করতে পারবে না।
৩. Estoppel আদালতের ভুল সিদ্ধান্ত বা রায়কে বাধা দেয় না

যদি কোনো আদালতের ভুল সিদ্ধান্ত হয় বা সত্য গোপন করা হয়,
Estoppel দেখিয়ে সেটা সংশোধন থামানো যাবে না।

৪. Estoppel দিয়ে কোনো অধিকার সৃষ্টি করা যায় না

Estoppel কাউকে এমন কোনো নতুন অধিকার তৈরি করে না, যা তার আগে ছিল না। উদাহরণ: কারও প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সম্পত্তির মালিকানা দাবি করা যাবে না, যদি প্রকৃতপক্ষে মালিকানা না থাকে।

৫. Estoppel অপরাধমূলক বিষয়ে প্রযোজ্য নয়

ফৌজদারি মামলায় (Criminal cases) সরাসরি Estoppel ততটা প্রযোজ্য নয়। অপরাধের বিষয়ে কাউকে আগের কথা দেখিয়ে ছাড় দেওয়া যাবে না।

৬. প্রতারণা বা জালিয়াতি থাকলে Estoppel প্রয়োগ হয় না

যদি প্রতিশ্রুতি বা প্রতিনিধিত্ব প্রতারণার মাধ্যমে আদায় করা হয়, তাহলে Estoppel প্রয়োগ হবে না। আইন প্রতারণাকে সমর্থন করে না।

সংক্ষেপে ছক:

সীমাবদ্ধতা

ব্যাখ্যা

অবৈধ প্রতিশ্রুতি

বেআইনি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা যাবে না

আইনি অধিকার ও পরিবর্তন

আইনের বিরুদ্ধে Estoppel প্রয়োগ নয়

আদালতের ভুল সংশোধন

ভুল রায় শুধরাতে Estoppel বাধা নয়

নতুন অধিকার সৃষ্টি নয়

Estoppel দিয়ে মালিকানা বা অধিকার জন্মে না

ফৌজদারি মামলায় সীমিত প্রয়োগ

অপরাধের ক্ষেত্রে কম প্রযোজ্য

প্রতারণার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়

জালিয়াতির ক্ষেত্রে Estoppel প্রয়োগ হবে না

উল্লেখ্য, Estoppel ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে, কিন্তু আইনের শাসন বা নীতিকে লঙ্ঘন করতে দেয় না।

বাংলাদেশে Estoppel আদালতে কীভাবে প্রয়োগ হয়

বাংলাদেশে প্রতিবন্ধকতার নীতি (Estoppel) মূলত সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ (Evidence Act, 1872) এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়।  বিশেষ করে, সাক্ষ্য আইন এর ধারা ১১৫ (Section 115) সরাসরি Estoppel নিয়ে কথা বলে।


সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ — ধারা ১১৫ (Section 115) — প্রতিবন্ধকতা

যদি কোনো ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে একটি বিষয়ে বিশ্বাস করাতে কার্যত বা কথায় কোনো বিবৃতি দেয় বা আচরণ করে, এবং সেই ব্যক্তি তা বিশ্বাস করে কোনো কাজ বা অবস্থান পরিবর্তন করে, তাহলে প্রথম ব্যক্তি তা অস্বীকার করতে বা ভিন্ন কথা বলার অধিকার রাখে না।সরল ভাষায়: আপনি কাউকে কিছু বোঝালেন বা করলেন, তিনি সেটার ওপর নির্ভর করলেন — এখন আপনি তা অস্বীকার করতে পারবেন না।

আদালতে Estoppel প্রয়োগের ধাপসমূহ

১. প্রমাণ উপস্থাপন
➔ যে ব্যক্তি Estoppel দাবি করছেন, তাকে প্রমাণ করতে হয়:

  • অপরপক্ষ কোনো প্রতিশ্রুতি বা প্রতিনিধিত্ব করেছিল,

  • তিনি তা বিশ্বাস করে নির্ভর করেছেন এবং

  • অবস্থান পরিবর্তন করেছেন বা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

২. আদালতের বিচার
➔ বিচারক দেখবেন:

  • প্রতিশ্রুতি/প্রতিনিধিত্ব সত্যি ছিল কি না,

  • নির্ভরতা যুক্তিসঙ্গত ছিল কি না,

  • নির্ভর করে কাজ করার ফলে ক্ষতি হয়েছে কি না।

৩. ফলাফল (Ruling)
➔ যদি উপরের তিনটি শর্ত পূরণ হয়, তাহলে আদালত বলবে:

  • যিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি তার বক্তব্য থেকে সরে আসতে পারবেন না।

  • বিপরীত কথা বলা "barred" হয়ে যাবে।

  • আদালত তাকে তার পূর্ব অবস্থানে বাধ্য করবে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

  • Estoppel হলো রক্ষাকবচ, আলাদা মামলা না।

  • এটি সাধারণত প্রতিরক্ষামূলক দাবি (Defense) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

প্রতারণা (Fraud) বা অসততা (Misrepresentation) থাকলে আদালত আরও জোরালোভাবে Estoppel প্রয়োগ করে।

Post a Comment

0 Comments