বাংলাদেশের সংবিধানে "আইন" (Law) এবং "আইনের ব্যাখ্যা" (Interpretation of Law) সম্পর্কিত বিষয়গুলো কিছু নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে। নিচে তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:
১. “আইন” এর সংজ্ঞা – অনুচ্ছেদ ১১১, ১৫২
অনুচ্ছেদ ১৫২ (সংজ্ঞা):
এই অনুচ্ছেদে “আইন” শব্দের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে:
“আইন” অর্থ যেকোন আইন, অধ্যাদেশ, আদেশ, বিধিমালা, প্রবিধানাবলি, উপ-আইন, বিজ্ঞপ্তি এবং অন্যান্য আইনগত দলিল যা আইনানুগ ক্ষমতাবলে প্রণীত।
অর্থাৎ:
- সংসদে প্রণীত আইন (Act of Parliament)
- অধ্যাদেশ (Presidential Ordinance)
- বিধিমালা / প্রবিধানাবলি (Rules, Regulations)
- সরকার বা সংস্থা কর্তৃক প্রণীত উপ-আইন (By-laws)
এসব কিছু “আইন” এর অন্তর্ভুক্ত।
অনুচ্ছেদ ১১১ (বাধ্যতামূলক নজির):
"বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় বাধ্যতামূলক এবং হাইকোর্ট বিভাগ ও নিম্ন আদালতসমূহ কর্তৃক তা অনুসরণীয়।"
অর্থাৎ, আপিল বিভাগের রায় ও সিদ্ধান্তগুলো আইন হিসেবে গণ্য হয়, এবং সেগুলোর ব্যাখ্যাও কার্যত আইন হয়ে দাঁড়ায়।
২. আইনের ব্যাখ্যা – বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা: অনুচ্ছেদ ১০২ ও ১০৫
অনুচ্ছেদ ১০২:
এই অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের মাধ্যমে সংবিধান ও আইনসমূহের বিচারিক ব্যাখ্যা প্রদানের ক্ষমতা নিশ্চিত করে। জনগণ সংবিধানের লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে রিট করতে পারে। এর ফলে হাইকোর্ট আইন এবং সংবিধানের যথার্থ ব্যাখ্যা দেয়।
অনুচ্ছেদ ১০৫:
সুপ্রীম কোর্ট পূর্বে প্রদত্ত সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনার (Review) সুযোগ রাখে, যার মাধ্যমে কোনো আইনের ব্যাখ্যা পরিবর্তিত বা পুনঃনির্ধারিত হতে পারে।
৩. সংবিধানের সর্বোচ্চতা – অনুচ্ছেদ ৭
অনুচ্ছেদ ৭(২):
“এই সংবিধানই প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন।”
এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংবিধানই চূড়ান্ত আইন, এবং অন্য যেকোনো আইন বা রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ যদি সংবিধানের পরিপন্থী হয়, তা বাতিলযোগ্য।
৪. আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত – অনুচ্ছেদ ৮০–৮৫
এই অনুচ্ছেদগুলোতে সংসদ কর্তৃক আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সম্মতিতে আইন কার্যকর হয়, এবং এগুলো সংবিধানের ব্যতিক্রম হতে পারে না।
0 Comments