নিষেধাজ্ঞা(Injunction)
প্রশ্ন-১. সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে নিষেধাজ্ঞা(Injunction) বলতে কি বুঝেন? বিভিন্ন প্রকার নিষেধাজ্ঞা উল্লেখসহ সেগুলো কোন কোন অবস্থায় নিষেধাজ্ঞাগুলো চাওয়া যেতে পারে- আলোচনা করুন।
প্রশ্ন-২. আদালতে মামলা চলাকালীন সময়ে বিবাদী নিষেধাজ্ঞা অমান্যপূর্বক গৃহ নির্মাণ করলে আদালত কি প্রতিকার আদেশ দিতে পারেন? উদাহরণসহ আলোচনা করুন।
নিষেধাজ্ঞা(What is Injunction)
সাধারণভাবে বলতে গেলে কোন কিছু করা বা না করার আদেশই হলো নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে মূলতঃ কোন সংজ্ঞা আইনে দেওয়া নাই তবে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫২-৫৭ ধারা এবং দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৩৯ আদেশের ১-৫ বিধিতে বিস্তারিত আলোচনা আছে। ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫২ ধারায় নিষেধাজ্ঞাকে একটি নিরোধক প্রতিকার বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং উহা আদালতের ইচ্ছাধীন ক্ষমতা ফলে অস্থায়ী বা চিরস্থায়ী ইনজাংশন জারীর মাধ্যমে নিরোধক প্রতিকার হিসেবে মঞ্জুর করা হয়। অর্থাৎ মোকদ্দমা চলাকালীন সময় উহার বিষয়বস্তুর স্থিতিবস্থা বজায় রাখার জন্যে এবং ন্যায় বিচারের স্বার্থে আদালতের ইচ্ছাধীন ক্ষমতা বলে প্রদত্ত আদেশ বা নিষেধমূলক নির্দেশাবলীর সমষ্টিকে নিষেধাজ্ঞা বলা যেতে পারে।
মোট কথা আদালত মোকদ্দমায় কোন পক্ষভুক্ত পক্ষকে যে আদেশ বা ডিক্রী দ্বারা কোন একটি বিশেষ কাজ করার নির্দেশ দেন অথবা কোন একটি কাজ করা হতে বিরত রাখার জন্য নির্দেশ বা আদেশ দেন তাকে নিষেধাজ্ঞা বলে।
নিষেধাজ্ঞার বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য
রোমান আইনে Chancellors কর্তৃক "Interdict" বা "নিষেধ” শব্দের মাধ্যমে, নিষেধাজ্ঞার আগমণ। নিষেধাজ্ঞা, মোকদ্দমায় চূড়ান্ত রায় ও ডিক্রী কিংবা বিচারাধীন মোকদ্দমায় প্রাথমিক অথবা অন্ত বর্তীকালীন আদেশ মাধ্যমে প্রতিকার দেওয়া হয়ে থাকে। মোকদ্দমা চূড়ান্ত শুনানীর পর ডিক্রী এবং বিচারাধীন মোকদ্দমায় আদেশ মাধ্যমে প্রতিকার দেওয়া হয়ে থাকে।
বিচারাধীন মোকদ্দমায় নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে যে প্রতিকার দেওয়া হয়ে থাকে তা সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৩ ধারা এবং দেওয়ানি কর্যবিধি আইনের ৩৯ আদেশ অবলম্বনে প্রতিকার দেওয়া হয়ে থাকে। অপর পক্ষে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে ৫৪/৫৫ ধারা অবলম্বনে রায় ও ডিক্রীর মাধ্যমে প্রতিকার দেওয়া হয়ে থাকে।
নিষেধাজ্ঞা, ডিক্রী কিংবা আদেশ যে পদ্ধতিতেই হউক না কেন নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, কাউকে অপর কারও কোন অধিকারে কোন কিছু করা থেকে নিবৃত্ত করা বা স্বত্ব-দখলীয় সম্পত্তিতে প্রবেশ নিবারক, বাধা-দায়ক এবং সংরক্ষণমূলক ডিক্রী বা আদেশ দেওয়া। কিন্তু সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৫ ধারার ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে বিচারাধীন মোকদ্দমায় অন্তর্বর্তীকালীন কিংবা প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞার আদেশ কোন পক্ষ কর্তৃক অমান্য করলে ৫৫ ধারার প্রতিকার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে তৎপূর্বে নয়।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এবং দেওয়ানি কর্যবিধি আইনে প্রদত্ত নিষেধাজ্ঞার দিক নির্দেশনা ছাড়াও আদালত দেওয়ানি কর্যবিধি আইনের ১৫১ ধারা মতে নিষেধাজ্ঞার প্রতিকার দিতে পারে। যেমন দেওয়ানি কর্যবিধি আইনের অধীন ৩৩ আদেশ ১ বিধির (Paupers) মোকদ্দমা, উক্ত আইনের ৯ আদেশের ৯ ও ১৩ বিধির, ৪১ আদেশের অধীন। দেওয়ানি কর্যবিধি আইনের অধীনে Miscellanious Case এ আদালত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রবেশ নিষেধ, বাধাদায়ক কিংবা সংরক্ষণমূলক আদেশ দিতে পারে। এই প্রকার আদেশ অবশ্যই Law of Equity-র আওতাধীন হতে হবে।
এই প্রকার আদেশের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আদালতকে বিবেচনায় রেখে/নিয়ে, নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রয়োগ করতে হবে যেমন—
১। Right of action (ন্যায় বিচার পূর্ণ প্রক্রিয়া)
২। Multiplicity of suit (মোকদ্দমার পৌণঃপুণিকতা)
৩। Necessity of mankind (মানুষের প্রয়োজনীয়তা)
8 Natural Justice (ন্যায়পরতামূলক প্রতিকার)
আইন বিজ্ঞান মানুষের প্রয়োজনীয়তা এবং দেশীয় ভূমি আইন ও বিধি-বিধানের উপর নির্ভরশীল। প্রয়োজনীয়তা এবং ভূমি আইন-আইন আদালত স্বাভাবিকভাবেই অপক্ষপাতিত্বের নীতি অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে।
অন্তর্বর্তীকালীন এবং স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে মোকদ্দমার পক্ষভুক্ত পক্ষের অধিকার সংরক্ষণ করা এবং ভবিষ্যত যে কোন প্রকার ক্ষতির হাত থেকে, কোন কিছু রক্ষা করা কিংবা মোকদ্দমা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতিবস্থা বজায় রাখার মাধ্যমে পক্ষের স্বত্ব, স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষণ করা। (source-নিষেধাজ্ঞা আইন: আলী আকবর প্রামাণিক)
Koyata (i) PLD 1978 COITA 164 বলা হয়েছে-নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হলো মোকাদ্দমার বিষয়বস্তু পরিবর্তন না ঘটালে, যতক্ষণ পর্যন্ত না উহার চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়। অর্থাৎ স্থিতাবস্থা বজায় রাখাই উহার মূল উদ্দেশ্য।
AIR 1962 sc 727-বলা হয়েছে, আদালত তার অর্ন্তনিহিত ক্ষমতা বলে ন্যায় বিচারের স্বার্থে প্রয়োজন অনুসারে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিতে পারেন।
নিষেধাজ্ঞা এবং রিসিভার এর পার্থক্য (Injunction and Receiver-Difference)
দেওয়ানি কর্যবিধি আইনের ৯৪ (গ) (ঘ) ধারায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রদান এবং রিসিভার নিয়োগ প্রসঙ্গে আদালতকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর এবং রিসিভার নিয়োগ উভয় ক্ষেত্রে ন্যায়পরতা (Equity) সহায়ক ভূমিকা পালন করে। দেওয়ানি কর্যবিধি আইনের ৩৯ আদেশ মতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা এবং উক্ত আইনের ৪০ আদেশ মতে রিসিভার নিয়োগ আদেশ নিয়ন্ত্রিত।
অস্থায়ী বা অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা আদেশে, মোকদ্দমার পক্ষভুক্ত কোন পক্ষের কোন স্বত্ব, স্বার্থ, অধিকার এবং দখল প্রমাণ হয় না অনুরূপভাবে অন্তর্বর্তীকালীন রিসিভার নিয়োগের মাধ্যমে সম্পত্তির স্বত্বের পরিবর্তন কিংবা বিশেষ অধিকার সৃষ্টি হয় না। উভয় আদেশের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে- সম্পত্তির স্বত্ব, স্বার্থ এবং অধিকার নির্ধারণের পূর্ব পর্যন্ত আইনের স্বার্থে নিরাপদ সংরক্ষণ করা।
রিসিভার এবং অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ন্যায়পরতার প্রতিকার রূপে বিচারাধীন মোকদ্দমায় অন্তর্বর্তীকালীন দরখাস্তের প্রেক্ষিতে Equity-র প্রতিকার। নিষেধাজ্ঞা এবং রিসিভার "Extra ordinary equitable remedies". এবং সাময়িক ও সহায়ক আদেশ এবং যা মূল মোকদ্দমার মুখ্য আদেশ বা রায় ডিক্রীর উপর নির্ভরশীল। অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে কোন অবস্থাতেই মূল মোকদ্দমায় কোন প্রকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না এবং মূল মোকদ্দমার আদেশ, রায় ও ডিক্রীর সঙ্গে সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের কার্যকারিতা, অকার্যকর কিংবা সমাপ্তি ঘটে থাকে। অর্থাৎ Extra ordinary equitable remedies-এর পরিসমাপ্তি ঘটবে।
নিষেধাজ্ঞা এবং রিসিভার বিষয়ে Extra ordinary equitable remedies-এর ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে- নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে সম্পত্তি বা বিরোধীয় বিষয়বস্তু পক্ষের নিকট সংরক্ষণ থাকে অপরপক্ষে রিসিভারের ক্ষেত্রে সম্পত্তি বা বিরোধীয় বিষয়বস্তু আদালত কর্তৃক নিযুক্তিয় ব্যক্তির নিকট সংরক্ষণ থাকে এবং উভয় পক্ষই সম্পত্তি বা বিরোধীয় বিষয়বস্তুর দখল থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। Court of Equity রিসিভার নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে সম্পত্তি বা বিরোধীয় বিষয়বস্তু দখল প্রাপ্ত হয়ে থাকে এবং Court of Equity-র নির্দেশ অনুযায়ী সম্পত্তি বা বিরোধীয় বিষয়বস্তু পরিচালিত হয় বা হয়ে থাকে। অপর পক্ষে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সম্পত্তি বা বিরোধীয় বিষয়বস্তুর দখল হস্তান্তর হয় না দখলে বাধাবিঘ্ন সৃষ্টিকারীকে, দখলে বাধাবিঘ্ন সৃষ্টি করা থেকে নিবৃত্ত বা বিরত রাখে।
রিসিভার নিয়োগ নিষেধাজ্ঞারই নামান্তর রিসিভার, মোকদ্দমায় পক্ষভুক্ত পক্ষ, তাদের প্রতিনিধি এবং যারা সম্পত্তির দাবীদার তাদেরকে সম্পত্তির দখল নেওয়া থেকে নিবৃত্ত এবং দখল নেওয়া বা দখলে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত রাখে- তবে কোর্টের অনুমতিক্রমে দখল নেওয়া ভিন্ন কথা।
সুতরাং নিষেধাজ্ঞা এবং রিসিভার এর ক্ষেত্রে মূল পার্থক্য হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে সম্পত্তির দখল বিষয়ে "স্থিতিবস্থা" (Status quo) বজায় রাখা অপর পক্ষে রিসিভার নিয়োগের মাধ্যমে আদালত মনোনীত কোন তৃতীয় পক্ষের নিকট সম্পত্তির তত্ত্বাবধান বা দখল চলে যাওয়া। নিষেধাজ্ঞা এবং রিসিভার ভিন্ন ভিন্ন কারণে এবং ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে।
নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকাকালীন রিসিভার আদেশ সাধারণতঃ প্রত্যাখ্যান হয়ে থাকে। তাছাড়া যেখানে নিষেধাজ্ঞার উপাদান বিদ্যমান থাকবে সেখানে কোন ক্রমেই রিসিভার নিয়োগ হয় না বা করা যায় না। (source-নিষেধাজ্ঞা আইন: আলী আকবর প্রামাণিক)
বিভিন্ন প্রকার নিষেধাজ্ঞা(Type of Injunction) কোন কোন অবস্থায় নিষেধাজ্ঞাগুলো চাওয়া যেতে পারে?
(ক) (ক) অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা (Ad-interim Injunction)
(খ) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction)
(গ) চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Perpetual Injunction)
(ঘ) আদেশমূলক নিষেধাজ্ঞা (Mandatory Injunction)
(ক) অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা (Ad-interim Injunction): সাধারনভাবে বলা যায় যে, বিচারকার্য চলাকালীন অবস্থায় বাদী ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১০ অধ্যায় অনুসারে আদেশ লাভ করবে প্রত্যাশায় মোকদ্দমাটি উপস্থাপন করতে পারলে বাদী প্রয়োজনে অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার অধিকারী হবেন।
১৯০৮ সালের দেঃ কার্যবিধির আদেশ ৩৯ নিয়ম ৩ মতে, নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করার পূর্বে কেন নিষেধাজ্ঞা জারী করা হবে না এই মর্মে কারণ দর্শানোর জন্য বিবাদী পক্ষকে নোটিশ দিতে হয়। কিন্তু আদালতের নিকট যদি প্রতিয়মান হয় যে, বিলম্বের ফলে নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্যে ব্যাহত হবে সেক্ষেত্রে বিবাদী পক্ষকে নোটিশ না দিয়েও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারী করা যাবে। কাজেই এক্ষেত্রের জন্যে অন্যপক্ষকে পূর্বে কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়ে একই সাথে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয় আর উহাকেই বলা হয় অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা (Ad-interim Injunction)।
অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা চাওয়ার ক্ষেত্র
অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা চাওয়ার ক্ষেত্রে Injunction হচ্ছে ন্যায় পরতামূলক প্রতিকার এবং উহা ন্যায়পরতা এবং ন্যায় বিচারের স্বার্থে দেয়া হয়। [PLO 1978 ও ITA 164]
অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ পেতে হলে বাদীকে শুধুমাত্র তার অনুকূলে মামলাটি রয়েছে প্রমান করলেই চলবে না। তাকে প্রমাণ করতে হবে যে, মামলাটির সুবিধায় দিকটি তার অনুকূলে এবং মামলাটি চলাকালনি সময় উহা রক্ষা না হলে তাকে অপূরনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
উদাহরণঃ 'শিবা' স্বত্ব ঘোষণার মামলায় ডিক্রী প্রার্থনা করে 'মামুন' এর বিরুদ্ধে মামলার তফসিল বর্ণিত সম্পত্তিতে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। 'শিবা', স্বত্ব সম্পর্কিত যথাযথ কাগজপত্র দাখিল করার কারণে স্বত্ব ঘোষণার মামলা ও চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা নিষ্পত্তির পূর্বে 'মামুন'-কে উক্ত সম্পত্তি ভোগ দখলের উদ্যোগ থেকে বিরত রাখতে 'শিবা' ও 'মামুন' এর বিরুদ্ধে অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রার্থনা করতে পারেন।
(খ) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction) : সাধারণভাবে বলা যায় যে, বাদীর দায়ের কৃত মামলা চলাকালীন সময়ে বিবাদী যাতে মামলার বিষয়বস্তু কোন প্রকারেই হস্তান্তর বা কোন প্রকার রুপান্তর ঘটাতে না পারে অথবা অন্য কোন প্রকারে মামলার বিষয়বস্তু কোন ক্ষতিসাধন করতে না পারে সেজন্য মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিবাদীকে এরূপ কার্য হতে বিরত থাকার জন্য সাময়িকভাবে যে আদেশ দেয়া হয়, তাকেই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বা Temporary Injunction বলে।
১৮৭৭ সালেরসুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৩ ধারা মোতাবেক অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা হলো তেমন নিরোধ যা একটি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অথবা আদালতের পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকে। মামলার যেকোন অবস্থাতেই তা মঞ্জুর করা যায়।
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়ার ক্ষেত্র: অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়ার ক্ষেত্র প্রসঙ্গে ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৯ আদেশের ১ ও ২ বিধিতে নির্দেশ রয়েছে।
(১) দেওয়ানী কার্যবিধির ১নং বিধিতে বলা হয়েছে: যেক্ষেত্রে কোন মামলা এফিডেভিট দ্বারা বা অন্যভাবে প্রমাণিত হবে—
(ক) মামলায় জড়িত কোন সম্পত্তি মামলার কোন পক্ষ কর্তৃক বিনষ্ট, ধ্বংস বা হস্তান্ত রিত হবার আশংকা দেখা দিয়েছে অথবা কোন ডিক্রী জারীর দরুন বে-আইনীভাবে বিক্রয় হওয়ার উপক্রম হয়েছে, অথবা
(খ) বিবাদী তার পাওনাদারকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে তার সম্পত্তি অপসারিত বা হস্তান্তরিত করার ইচ্ছা প্রকাশ বা হুমকি প্রদর্শন করেছে তখন আদালত অনুরূপ কার্যরোধ করার জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিতে পারবেন।
(২) দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৯ আদেশের ২নং বিধিতে বলা হয়েছে: বিবাদীকে চুক্তি ভঙ্গ করা বা অন্য কোনরুপ ক্ষতিকর কার্য হতে বিরত রাখার মামলায় বাদী মামলা দায়ের হবার পর যে কোন সময় উক্ত চুক্তি ভঙ্গ বা ক্ষতিকর কার্য হতে বা তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট অধিকারের সহিত সম্পর্কযুক্ত কোন ক্ষতিকর কার্য হতে বিবাদীকে নিরন্ত বা বিরত রাখার জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার প্রার্থনা করা যাবে।
উদাহরণঃ 'কাবিলা' কর্তৃক 'রিমা' এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মূল মামলা বা স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ না হওয়া পর্যন্ত 'কাবিলা' 'রিমা'-এর বিরুদ্ধে মামলার বিষয়বস্তুর ক্ষতি, হস্তান্তর কিংবা কোন প্রকার রুপান্তর হতে 'রিমাকে বিরত রাখার জন্য 'কাবিলা, 'রিমা'-এর বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার প্রার্থনা করতে পারেন।
(গ) চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Perpetual Injunction)
সাধারণভাবে বলা যায় যে, মামলায় চূড়ান্ত শুনানী অন্তে আদালত স্বীয় বিবেচনা মতে বাদীকে এমন একটি চিরস্থায়ী অধিকারের আদেশ দেন যার দ্বারা বিবাদী বাদীর উক্ত অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হতে চিরকাল বিরত থাকতে বাধ্য একেই চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বলে।
১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৪ ধারা মোতাবেক চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র মামলায় মামলার চূড়ান্ত শুনানীর পর মামলার গুনাগুণের উপর ভিত্তি করে আদালতের স্বীয় বিবেচনা মতে প্রদও ডিক্রীর দ্বারা মঞ্জুর করা যায়। ইহার মাধ্যমে আদালত বাদীকে চিরস্থায়ীভাবে অধিকারের আদেশ দেন এবং বিবাদীকে চিরস্থায়ীভাবে অধিকার ভোগ বা কাজ হতে বিরত থাকার বা বাদীর অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হতে চিরতরের জন্যে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারী করে থাকেন।
চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়ার ক্ষেত্র
চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়ার ক্ষেত্রে যখন বিবাদী, বাদীর সম্পত্তির অধিকারে অনধিকার হস্তক্ষেপ করে অথবা করার হুমকি দেয়। তখন আদালত কর্তৃক নিম্নোক্ত ক্ষেত্রসমূহে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুরের জন্যে আবেদন করা যায়।
(ক) যেখানে বিবাদী বাদীর পক্ষে জিম্মাদার।
(খ) যেখানে অধিকার লংঘনের ফলে বাস্তব ক্ষতি অথবা সম্ভাব্য ক্ষতি নিরুপনের কোন মানদণ্ড নেই।
(গ) যেখানে অধিকার লংঘন এমন ধরনের যে, আর্থিক ক্ষতিপূরণ দ্বারা তার পর্যাপ্ত প্রতিকার হয় না।
(ঘ) যেখানে এমন সম্ভাবনা থাকে যে, অধিকার লংঘনের জন্যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না।
(ঙ) যেখানে বিচার কার্যক্রমের সংখ্যাধিক্য নিরোধের জন্যে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।
উদাহরণঃ শহরের আবাসিক এলাকায় 'আবুল' রেস্টুরেন্ট দিয়ে তাতে সর্বদা মাইক যোগে রেকর্ড বাজায়ে এলাকয় শান্তি নষ্ট করবার কাজ হতে বিরত থাকার জন্যে এলাকাবাদী 'আবুল’ এর বিরুদ্ধে অস্থায়ী ও স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা করতে পারেন।
(ঘ) আদেশমূলক নিষেধাজ্ঞা (Mandatory Injunction)
সাধারনভাবে বলা যায় যে, মামলার কোন পক্ষ আদালতের আদেশ অমান্য করলে বা আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে আদালতের আদেশের বিপরীতে কোন কার্যসম্পাদন করলে পক্ষ কর্তৃক আদালতের আদেশ ভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য উক্ত আদেশ ভঙ্গকারী পক্ষের প্রতি যে আদেশ প্রদান করেন তাকে আদেশমূলক নিষেধাজ্ঞা বলে।
১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৫ ধারা অনুসারে, মামলার কোন পক্ষ আদালতের আদেশ অমান্য করলে বা আদালতের আদেশ অমান্য করে আদালতের আদেশের বিপরীতে কোন কার্যসম্পাদন করলে আদালত আদেশ ভঙ্গ প্রতিরোধ করবার এবং সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় কার্য-সম্পাদনে বাধ্য করার জন্যে উক্ত আদেশ ভঙ্গকারী পক্ষের প্রতি যে আদেশ প্রদান করেন তাকে আদেশমূলক নিষেধাজ্ঞা বা Mandatory Injunction বলে।
আদেশমূলক নিষেধাজ্ঞা চাওয়ার ক্ষেত্র
অনেক সময় এমন দেখা যায় যে, বাদীপক্ষ আদালত হতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা নেবার উদ্যোগ নেয়ার সাথে সাথে বিবাদী পক্ষ তাড়াহুড়া করে অবাঞ্চিত কাজটি করে বসে, অর্থাৎ বিরোধীয় সম্পত্তি বা বিষয়বস্তুর প্রাচীর নির্মাণ, মাটি খনন কিংবা সম্পত্তির বা বিষয়বস্তুর রুপ পরিবর্তন করে হস্তান্তর করে বা করবার উদ্রোগ গ্রহণ করে তদ্বাস্থায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারী অনেক সময় অর্থহীন হয়ে পড়ে।
আদালত উক্তরূপ পরিস্থিতিতে, আইনের শাসন বলবৎ করার উদ্দেশ্যে কেবল নিষেধাজ্ঞা জারীই করবেন না, উপরন্ত জারির পূর্বে বিরোধীয় সম্পত্তি যে অবস্থায় ছিল তা ফিরিয়ে আনার জন্য যথোপযুক্ত আদেশ দান করতে পারবেন। আর এটাই হচ্ছে আদেশমূলক নিষেধাজ্ঞা।
আদালতে মামলা চলাকালীন সময় নিষেধাজ্ঞা অমান্যপূর্বক
গৃহ নির্মাণের প্রতিকার
মামলা চলাকালীন সময় বিবাদী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গৃহনির্মাণ করলে আদালত ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৫ ধারার বিধান বলে আদেশমূলক নিষেধাজ্ঞা যা ইনজাংশন জারি করে নির্মিত গৃহ ভেঙ্গে ফেলার আদেশ দিতে পারেন অর্থাৎ আদালত উক্ত বিবাদীকে গৃহ নির্মাণ হতে বিরত থাকার জন্যে অদেশমূলক নিষেধাজ্ঞার প্রতিকার আদেশ দিতে পারেন।
উদাহরণঃ 'আবুল’ স্বত্ব ঘোষণার মামলার ডিক্রী প্রার্থনা করে করিম এর বিরুদ্ধে মামলার তফসিল বর্ণিত সম্পতিতে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন এবং নিষেধাজ্ঞা জারী হবার পর বিবাদী করিম নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উক্ত সম্পত্তিতে একটি গৃহ নির্মাণ করেন আদালত উকরূপ কর্ম থেকে অর্থাৎ গৃহ নির্মাণ থেকে করিমকে বিরত থাকার জন্যে আদেশমূলক নিষেধাজ্ঞা দিতে পারেন।
অতএব মামলা চলাকালীন সময়ে বিবাদী নিষেধাজ্ঞার আদেশ অমান্য করে গৃহ নির্মাণ করলে আদালত বিবাদীকে এরূপ কার্য থেকে বিরত থাকার জন্যে আদেশমূলক নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিতে পারেন যা উক্ত উদাহরণের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
0 Comments