সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

ফৌজদারি বিষয়াদি(Criminal issues)

 

ফৌজদারি বিচারের সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় কি?; ফৌজদারি মামলার শাস্তি কি?; অপরাধের চারটি স্তর কী কী?; ফৌজদারি মামলা থাকলে কি বিদেশ যাওয়া যায়?;

Criminal issues

বিষয়

আইনি বিধান

০১.মৃত্যুদণ্ড(Death Penalty)


বিচারিক আদালত মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদানের পর দণ্ডাদেশ নিশ্চিত করণের (Confirm) জন্য হাইকোর্ট বিভাগ প্রেরণ করে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩ ধারা ৩৭৪ অনুযায়ী উক্ত রেফারেন্স প্রেরণ করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগ সাজা নিশ্চিত/বাতিল/অন্য কোন সাজা প্রদান করতে পারে।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার ধাপসমূহ–

১. অপরাধ সংঘটন

২. মামলা রুজু ও তদন্ত

৩. আদালতে বিচার

৪. মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা (যদি দোষ প্রমাণিত হয়)

৫. CrPC ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স। কোনো মৃত্যুদণ্ডাদেশ হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন(Death Reference Case) ছাড়া কার্যকর হয় না। 


৬. আপিল / রিভিউ / রিভিশন / রিট আবেদন

৭. রাষ্ট্রপতির কাছে মার্জনা(Article 49 of Constitution) রাষ্ট্রপতির ক্ষমা (Presidential Pardon)

৮. কার্যকরকরণ (Execution by hanging)


০২.আমৃত্যু কারাদণ্ড (Imprisonment Until Death)


অপরাধের ভয়াবহতা বিবেচনা করে আদালত কিছু বিরল মামলায় আসামীকে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজার মধ্যবর্তী একটি সাজা প্রদান করে। উক্ত সাজা হচ্ছে আমৃত্যু কারাদণ্ড। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি চাইলে এই শাস্তিও ক্ষমা বা লঘু করতে পারেন। তবে "আমৃত্যু" কথাটি আদালত স্পষ্ট করে দিলে সাধারণ ক্ষমার প্রক্রিয়া জটিল হয়।

০৩.যাবজ্জীবন কারাদণ্ড(Life Imprisonment)


অপরাধ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হলে এবং বিচারক উপাদান সমূহ প্রাধান্য লাভ করলে আদালত মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করে।


বাংলাদেশের আদালতগুলোর মতে, “যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে সারাজীবন”। তবে ফৌজদারি কার্যবিধি (CrPC) ও সরকার কর্তৃক প্রদত্ত রেয়াত (remission) অনুযায়ী:


👉 ১টি যাবজ্জীবন দণ্ড = ৩০ বছর (সাধারণভাবে)

👉 রেয়াত/Remission থাকলে ২০ বছর বা কমও হতে পারে

👉 তবে কিছু রায়ে “সত্যিকার অর্থে যাবজ্জীবন” বলে উল্লেখ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।


০৪. দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল (Appeal Against Conviction/Sentence)



বিচারিক আদালত অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে দণ্ড ও সাজা প্রদান করলে তিনি উচ্চ আদালতে উক্ত দণ্ড ও সাজা চ্যালেঞ্জ করে আপীল দায়ের করতে পারেন।

বাংলাদেশে ফৌজদারি কার্যবিধির (Criminal Procedure Code, 1898 - CrPC) ধারা ৪১০  অনুযায়ী দণ্ডিত ব্যক্তি জেলা জজ বা হাইকোর্ট ডিভিশনে আপিল করতে পারেন। আবার ধারা ৪১৭ এর বিধান মতে সরকারি পক্ষও খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে।

ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৩৭৪-৩৭৯ তে ফৌজদারি মামলার আপিল পদ্ধতি বিধান বর্ণিত আছে। সংবিধানের ১০৩ এ ‘হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল’ করার বিধান রয়েছে।


০৫.আদেশের বিরুদ্ধে আপিল


তদন্ত এবং বিচারের পর্যায়ে আদালত বিভিন্ন আদেশ প্রদান করে থাকেন। সে আদেশসমূহের বিরুদ্ধে আপিল আদালতে আপিল দায়ের করা যায়।

০৬.খালাসের বিরুদ্ধে আপীল


রাষ্ট্রপক্ষ বা অভিযোগকারী বিচারিক আদালতের খালাস ও রায়ের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করতে পারেন।তবে উক্ত আপীল দায়েরের ক্ষেত্র/সুঝোগ খুবই সংকীর্ণ।

০৭. ফৌজদারী রিভিশন


ফৌজদারী রিভিশন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দায়রা আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগ উভয়ের সমবর্তী ক্ষমতা রয়েছে দেওয়ানী আদালতের মত ফৌজদারী আদালতে দ্বিতীয় রিভিশন করার সুঝোগ নেই। তৃতীয় পক্ষের ফৌজদারী রিভিশনের আবেদন করতে পারে। আদালত নিজ উদ্দ্যেগে (sou moto) ফৌজদারী রিভিশন ক্ষমতা পরিচালনা করতে পারে।

০৮. ফৌজদারী রিভিউ বা পূণর্বিবেচনা


সংবিধানের অনু্চ্ছেদ ১০৫ এ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ তাদের রায় ও আদেশ পূণর্বিবেচনা করতে পারে।

০৯. জামিন


তদন্ত, অনুসন্ধান বা বিচার চলাকালে হাজতী আসামী অদস্তন আদালত বা হাইকোর্ট বিভাগে জামিনের আবেদন করতে পারেন জামিন যোগ্য জামিন পাওয়া অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার। জামিন অযোগ্য অপরাধে জামিন প্রদান আদালতের এখতিয়ার।


জামিনের আইনি ধারা:

CrPC 496-502 → জামিন সংক্রান্ত বিধান

CrPC 498 → হাইকোর্ট ও দায়রা জজের আগাম জামিনের ক্ষমতা

CrPC 497 → জামিনযোগ্য ও অজামিনযোগ্য অপরাধ


১০. বিচারাধীন আপীলে জামিন


আপীল নিষ্পত্তি কালীন সময়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী জামিন আবেদন করতে পারেন। উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত জামিন মঞ্জুর করতে পারে।

১১. রুল শুনানি পর্যায়ে জামিন

হাইকোর্টে রুল জারি হওয়ার পর মূল শুনানির দিন আদালত যখন আবেদনকারীকে চূড়ান্তভাবে জামিন দেয়, সেই অবস্থাকে রুল শুনানি পর্যায়ে চূড়ান্ত জামিন (final bail) বোঝানো হয়।

১২.আগাম জামিন


আগাম জামিন হলো এমন এক ধরনের জামিন যা একজন ব্যক্তি গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই আদালতের কাছে চেয়ে নিতে পারেন, যদি তার বিরুদ্ধে আসন্ন গ্রেপ্তারের আশঙ্কা থাকে বিশেষ করে কোনো ফৌজদারি অভিযোগ বা মামলা দায়েরের পর। বাংলাদেশে “আগাম জামিন” শব্দটি স্পষ্টভাবে কোনো আইনে উল্লেখ নেই, তবে উচ্চ আদালতের বিচারিক দৃষ্টান্ত (precedent) অনুসারে এই জামিন চাওয়া এবং পাওয়া সম্ভব।


মূলত দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগ জামিন দিতে পারে।


এই ধারা অনুসারে আদালত তার অবাধ বিচারিক ক্ষমতার মাধ্যমে (inherent power) আগাম জামিন প্রদান করে থাকে।

১৩.মামলা বাতিল


ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৬১ ক ধারার অধীনে একজন অভিযুক্ত ব্যাক্তি হাইকোর্ট বিভাগে মামলার কার্যধারা বাতিল চেয়ে আবেদন করতে পারেন।

১৪.মামলা স্থানান্তর


হাইকোর্ট বিভাগ যেকোন ফৌজদারী মামলা একটি ফৌজদারী আদালতে স্থানান্তর করতে পারে। দায়রা আদালত তার অধীনস্ত এক আদালত থেকে অন্য আদালতে ফৌজদারী মামলা স্থানান্তর করতে পারে।

ফৌজদারি মামলা (Criminal Case) মামলার ক্ষেত্রে 

Code of Criminal Procedure (CrPC) এর ৫২৬

ধারার আওতায় হাইকোর্ট বিভাগে মামলা স্থানান্তরের আবেদন করা যায়।


৫২৮ধারা মতে  দায়রা বা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মামলা স্থানান্তর করা যায়। 


অন্যদিকে দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে

Code of Civil Procedure (CPC), 1908 এর ২২–২৫ ধারার আওতায় দেওয়ানি মামলা স্থানান্তর করা যায়।


ধারা ২৪ এ বলা আছে যে, যেকোনো পর্যায়ে হাইকোর্ট বা জেলা জজ আদালত মামলা স্থানান্তরের নির্দেশ দিতে পারে।


১৫.পূণঃবিচার



পূণঃবিচার হলো এমন একটি বিচারিক প্রক্রিয়া, যেখানে আগের রায় বাতিল করে আবার নতুন করে বিচার শুরু করা হয়। এটি তখনই হয় যখন আদালত মনে করে, আগের বিচার প্রক্রিয়ায় ভুল হয়েছে, কিংবা ন্যায়বিচার হয়নি।


️ বাংলাদেশের আইনে পূণঃবিচারের বিধান কোথায় আছে?

দণ্ডবিধি (Criminal Cases):

Criminal Procedure Code, 1898 (CrPC) এর:


ধারা 403: একবার দণ্ডিত হলে একই অপরাধে আবার বিচার নয় (double jeopardy), তবে ব্যতিক্রম হিসেবে পুনঃবিচার অনুমোদিত হতে পারে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে।


ধারা 369 & 561A: আগের রায় যদি ভুল হয় বা ন্যায়বিচার ব্যাহত হয়, তবে High Court suo moto বা আবেদনের ভিত্তিতে পূণঃবিচার আদেশ দিতে পারে।


সিভিল মামলা (Civil Cases):

Code of Civil Procedure, 1908 (CPC) এর:

Order 47, Rule 1: পুনর্বিবেচনার আবেদন করা যেতে পারে যদি–

ক। নতুন তথ্য বা প্রমাণ পাওয়া যায়

খ। কোনো ভুল বা ভুল ব্যাখ্যার আশঙ্কা থাকে

গ। রায়ের ফলে অন্যায় হয়েছে বলে প্রমাণ হয়



Post a Comment

0 Comments